Short Story/ছোট গল্প



                              বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ও একজন নকুলচন্দ্র
 
                                                                                আতিক  চৌধুরী



২০৩০ সাল। এইচ এসসি পরীক্ষা কেবল শেষ হয়েছে নকুলচন্দ্রের। নকুলচন্দ্র ছাত্র হিসেবে ভালোই। ক্লাসওয়ানে ওএসসি, টুতে টিএসসি, থ্রি তে থ্রিএসসি, ফোর এ এফএসসি... এভাবে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত বারোটা পাবলিক পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত এগারটাতেই ডায়মন্ড এ প্লাস পেয়েছে সে। এখন খালি এইচএসসির রেজাল্ট বাকি। নকুলচন্দ্রের খুব ডাক্তারি পড়ার শখ। দেশে এখন মেডিকেল কলেজ সরকারী একশ তিনটা, বেসরকারি তিনশ দুইটা। ডেন্টালগুলা ধরলে আরও পঞ্চাশটা। সবমিলিয়ে সিট প্রায়পঁচিশ হাজারের মত।মাত্র পঁচিশ হাজার!নকুল ভাবে, তার মত এগারোটায়ই ডায়মন্ড এপ্লাস এখন দেশে প্রায়বিশ লাখ। বিশলাখে মাত্র পঁচিশহাজার সিট!নকুল ভাবে,একটা সিটের পিছনে প্রতিযোগী আশি জন।আর ঢাকা মেডিকেলে সিট এখন মাত্র এক হাজার। তারমানে ওখানে একটা সিটের পিছনে প্রতিযোগী দুই হাজার! পরিসংখ্যানে মাথা ঘুরে যায় নকুলের। কোচিং সেন্টারের মোটা মোটা লেকচার শিটগুলো বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে টরেন্ট থেকে ডাউনলোড দিয়েছিল সে। তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ খুলে নকুল দেখে ডাউনলোড হয়ে গেছে।সাথে সাথে পড়তে বসে নকুল। হাজার হাজারপৃষ্ঠা লেকচার। কিন্তু তার সব পড়তেই হবে, কারণ এক মার্ক পিছানো মানে হাজার হাজার ছাত্রের পিছনে চলে যাওয়া। নকুল পড়তে থাকে। সন্ধ্যা যায়, রাত যায়। দিন আসে, রাত আসে। নকুল পড়তেই থাকে। এইচএস সিতে যে কয় সেকেন্ড সে নষ্ট করেছিল তার জন্য নিজেকেই থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করে তার। এক দিন যায়, দু দিন যায়। এক সপ্তাহ পরে রেজাল্ট দেয় নকুলের। রেজাল্ট দেখে নকুল হতবাক হয়ে যায়। এক সাবজেক্টে ডায়মন্ড এ প্লাসনা তুলতে না পেরে তার ওভারঅল ডায়মন্ড এপ্লাস হয় নি। নকুল নেট খোলে। দেখে,দেশে এবার এইচএসসিতে ডায়মন্ড পেয়েছে সত্তর লাখ পরীক্ষার্থী। নকুলের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে যায়। নকুল অনলাইনে একশগ্রাম সায়ানাইড কেনে। সায়ানাইড ক্যাপসুলগুলো খাবার আগে সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যায়,আমার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী নই
***কদিন আগেই দুইটা ছোটভাই আত্মহত্যা করার পথ বেছে নিল। কেন নিল? জেএসসিতে তারা নাকি এ প্লাস পায় নাই। হায় এপ্লাস, তুমি মোরে করেছ মহান।তুমি মোরে দানিয়াছ কুত্তার সম্মান।










                                                ভাগ্য

                                                                         ফারজানা সাথী





অপু ও তপা দুজনই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে। উভয় বাড়ির ঘোর বিরোধিতার মুখে শেষ অব্দি কোর্টে গিয়ে তারা বিয়ে করে। কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই বলে ভাড়া নেয় একটি ঘর।
সম্বলের মধ্যে ছিল দুজনার জমানো কিছু টাকা। যা দিয়ে শুরু করে তারা তাদের নতুন পথের যাত্রা। জমানো টাকাগুলো খুব দ্রুত শেষ হতে শুরু করে। তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে কীভাবে তারা আগামী মাসে চলবে। জীবনের বাস্তব মুহূর্তে তারা এখন পদার্পণ। এতদিন মা-বাবার সংসারে যখন যা চেয়েছে, পেয়েছে। খেয়েছে কোন নামী রেস্তোরায়, ঘুরেছে পার্কে। এখন দিন বদলে গেছে। প্রতিটি পয়সা খরচ করতে হয় হিসেব করে। বিলাসিতা দূর করে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তারা এখন ব্যস্ত।
তপার ছোট বোন অপা আর অপুর ভাই দিপু দুজনে বাড়িতে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হয়নি। দুজনে দুজনার ভাই বোনের সাথে যোগাযোগ রাখে।
একসময়ে তারা দুজন দুটি টিউশনি যোগাড় করে। মাস শেষ হলে তারা অপেক্ষায় থাকে টাকার।
তপা টাকা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। হিসাব করে ফেলে টাকা দিয়ে কি করবে। বাসায় এসে সে অপুর জন্য অপেক্ষা করে। একসময়ে অপু বাসায় ফেরে। অপুকে দেখে সে গলা জড়িয়ে ধরে। অপু বলে কি টাকা পেয়েছ বুঝি? তপা জবাব দেয় হ্যাঁ। তারা দুজন তখন দুজনার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে। কিন্তু পরক্ষনে সে হাসি বন্ধ হয়ে যায় যখন অপু তার পকেটে হাত দিয়ে দেখে তার মানিব্যাগ পকেটমার নিয়ে গেছে। সে দুশ্চিন্তায় পড়ে। বিছানায় বসে ভাবে কীভাবে চলবে সারা মাস, কি দিয়ে দিবে ঘর ভাড়া।
তপা তখন তার কাঁধে হাত রেখে বলে, চিন্তা করোনা না আমার টাকাতো আছে, এ দিয়ে না হয় কষ্ট করে চলব সারা মাস। কিন্তু মনটা খারাপ লাগছে, তোমার জন্য এ টাকা দিয়ে একটা শার্ট কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হবে না। যাই হোক সামনের মাসে কিনব। অপু তপার চোখের দিকে তাকায়। সে লক্ষ্য করে এত অভাবের মাঝেও তপা অনেক সুখী যা কিনা সে নিজেও অনুভব করে।
তপা অপুর দিকে তাকিয়ে বলে, জানো কাল কত তারিখ? অপু বলল না। তপা তখন বলল, কাল ১৪ ফেব্রুয়ারী। তোমার সাথে আমার সম্পর্কের ৩ বছর পূর্ণ হবে। চল, কাল আমরা বাহিরে কোথাও খাই। অপু তাকে বলল, না এসবের এখন দরকার নেই। কিন্তু অপু তপার কথায় একসময় রাজি হলো। পরদিন তারা একটি ছোট ফার্স্টফুডের দোকানে গেল। সেখানে তারা ১টি পিজা আর ২টি পেপসি নিল। ওয়েটার তাদের বোতলের ছিপি খুলে দেয়। তপা ছিপি দুটো নিজের কাছে রেখে দেয়। ফার্স্টফুডের দোকান থেকে বের হওয়ার ছিপির দিকে তপার চোখ পড়ে। সে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে। ছিপির নিচে গাড়ির ছবি। ফার্স্টফুডের মালিক তাদের অভিনন্দন জানায়। সে তাদের এ কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে বলে। সাথে সাথে তারা কোম্পানির অফিসে যায় এবং ১০ লক্ষ টাকার চেক নিয়ে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় তারা মনে করে তাদের ভাগ্য খুলেছে। পড়ালেখা শেষ করার আগ পর্যন্ত তাদের আর টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। দুজনে ১টা রিক্সায় ওঠে। হঠাৎ তপার মোবাইলে রিং বেজে ওঠে। কল রিসিভ করার পর শোনে তার মমতাময়ী মায়ের কণ্ঠ। মা তাকে জানায় তপার বাবা তার আর অপুর সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। এ কথা শুনে তপার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। অপু তাকে কাছে টেনে নিয়ে অশ্রু মুছে দেয়।
তারা বাসায় ফিরে আরও অবাক হয় অপুর ভাই দিপু দরজায় দাঁড়িয়ে। দিপু বলে, এই বুঝি তোমাদের আসার সময় হলো? আমি কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে; চল বাবা তোমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে বলেছে। অপু আর তপা এ কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে ভাগ্য আজ আমাদের সুপ্রসন্ন।



No comments:

Post a Comment