Experience/অভিজ্ঞতা

            


হেথায় বৃথা কাঁদা

আতিক  চৌধুরী 





 গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসা জীবনে বড় হওয়ার জন্য। কিভাবে বড় হব, কত বড় হব তখন জানতাম না (এখনো জানি না)। শুধু জানতাম শহরে যেতে হবে, লেখাপড়া করতে হবে, তারপরে জীবনের কুসুম শয্যা। পল্লী প্রকৃতির কোলে বড় হয়েছি তাই পার্ক, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, সাইবার ক্যাফের পরিবর্তে আম-জাম, খাল-বিল, শিমুল-পলাশ, দোয়েল-কোয়েলের সাথে আমার চিরকালের সখ্যতা। রাজধানীতে এসে প্রথম চার দেয়ালের মাঝে জীবন শুরু। যে উচ্ছ্বাস, যে আনন্দ নিয়ে প্রথম ঢাকায় এসেছিলাম, তা ধুসর হতে বেশিদিন লাগেনি। এখানে কোকিল বসন্তের আগমন বার্তা শুনিয়ে গান গায় না, শরতের ভোরে কোন কিশোরী ঝরা শিউলি কুড়ায় না, বর্ষায় কদম ফুলের গন্ধে বাতাস ভরে উঠে না, দখিনা মলয় শরীর শীতল করে না। এখানে প্রকৃতির অপরূপ মাধুরির অমলিন শোভা নেই। এখানে গ্রীষ্ম-বর্ষা, শীত- বসন্ত ছকে বাঁধা নিয়মে কেটে যায়। প্রতিদিন একই কাজ করতে হয় একই রকমভাবে। শহরের প্রতিটি মানুষ যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অন্যের দিকে তাকানোর সময় নেই। একটু অসতর্ক, একটু অন্যমনা হলেই ঘোর বিপদ। কবি নির্মলেন্দু গুনের কথায়ঃ- “ জীবন হচ্ছে যুদ্ধ ক্ষেত্র/ ভুল করলেই হারতে হবে।’’  জীবন যুদ্ধে আমরা কেউ হারতে রাজি নই। তাই বোতাম টেপা বলের মত আমরা নির্ভুলভাবে কাজ করার চেষ্টা করি। নিরস ইট-পাথরের ভিতর থেকে মনটা অনেকটাই অনুভুতিশূন্য হয়ে যায়। এখানে জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অনুভুতি তাই বড়ই কঠিন। তারপরও ফেলে আসা স্মৃতি, ফেলে আসা গ্রাম হাতছানি দিয়ে ডাকে। কিন্তু সে ডাকের সাড়া সবসময় দেয়া সম্ভব হয়না। তখন নীরব কষ্টে দুচোখ ঝাপসা হয়ে যায়। কিন্তু,
হেথায় বৃথা কাঁদা
দেয়ালে পেয়ে বাঁধা,
কাঁদন ফিরে আসে
আপন কাছে।

No comments:

Post a Comment